অপারেশন থান্ডারবোল্ট-২০১৬
দিনটি ছিল ২০১৬ সালের পয়লা জুলাই। রমজান মাস, তারাবির নামাজের পর ক্লান্ত দেহে লোকজন ফিরছিলেন ঘরে। ঠিক তখনই বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে খবর আসতে থাকে ঢাকাস্থ গুলশানের 'হলি আর্টিজান' নামক রেস্তোরাঁয় জঙ্গী হামলার খবর। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ঘটনাস্থলে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
কিন্তু ঘটনা ক্রমশই খারাপের দিকে মোড় নিতে থাকে। এর মাঝে খবর আসে জঙ্গীদের ছোঁড়া গুলিতে ও গ্রেনেড হামলায় পুলিশের দুজন কর্মকর্তা আহত হয়ে পরবর্তীতে হাসপাতালে মারা যান।
এরপরই ঘটনাস্থলে আসে পুলিশের বিশেষায়িত দল 'সোয়াট'। সাথে র্যাব ও বিজিবিকে নিয়ে অভিযানের প্রস্তুতি শুরু হয়। কিন্তু জঙ্গীরা তখন হামলা করতে মরিয়া; ভেতর থেকে একটানা এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে তারা। এমতাবস্থায় ভেতরের আটকা পড়া দেশি-বিদেশি জিম্মিদের কথা ভেবে দেশের সর্বোচ্চ বাহিনীকে দিয়ে অভিযান পরিচালনা করার কথা চিন্তা করা হয়।
তারই ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনী মাননীয় সরকার প্রধানের কাছে 'প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড'কে দিয়ে অভিযান পরিচালনার সুপারিশ করে। সরকার প্রধান কর্তৃক আদেশপ্রাপ্ত হয়ে "চিতা'স ডেন" নামে পরিচিত সিলেটস্থিত প্যারা কমান্ডো সদরদপ্তর থেকে ১০০ জন অকুতোভয় কমান্ডোকে বিমান বাহিনীর এএন-৩২ বিমানে করে ঢাকায় উড়িয়ে আনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
এরপর প্যারা কমান্ডো ব্রিগেডের অধীনস্থ ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এম. এম. ইমরুল হাসানের নেতৃত্বে সরাসরি হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় অপারেশন পরিচালনায় পাঠানো হয়।
পরদিন সকাল সাতটা চল্লিশ মিনিট। নিজস্ব স্নাইপারদের বিভিন্ন বিল্ডিংয়ের জায়গামতো বসিয়ে এপিসি নিয়ে সরাসরি অভিযানে নামে প্যারা কমান্ডোরা। প্রথমেই এপিসির ধাক্কায় দেয়াল ভাঙার মাধ্যমে শত্রুদের দেয়া হয় এক প্রচণ্ড ও আকস্মিক 'ব্যাটেল শক'।
ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল হয়ে জঙ্গিরা বাইরে এসে হামলা করতে উদ্যত হলে, একে একে ছয়জন জঙ্গীকেই এক নিমিষেই কৌশল আর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের মাধ্যমে শেষ করে দেওয়া হয়। অপারেশন শুরুর মাত্র তেরো মিনিটের মাথায় নিজেদেরকে সম্পূর্ণ অক্ষত রেখে টার্গেট এলাকায় কর্তৃত্ব স্থাপন করে বাংলার প্যারা কমান্ডোরা।
উদ্ধার করা হয় ভেতরে আটকা পড়া তেরোজন দেশি-বিদেশি জিম্মিকে। এছাড়া উদ্ধার করা হয় বিশজনের মৃতদেহ, যাদের আগেরদিন রাতে জঙ্গীরা উক্ত রেস্তোরাঁয় হামলা করার পঁচিশ থেকে ত্রিশ মিনিটের মাথায় ধারালো অস্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করে। তাছাড়া উদ্ধার করা হয় জঙ্গীদের ব্যবহৃত বন্দুক, পিস্তল, গ্রেনেড ও ধারালো অস্ত্র, নিষ্ক্রিয় করা হয় আইইডি।
'অপারেশন থান্ডারবোল্ট' দেশে-বিদেশে বিশেষ সুনাম অর্জন করে। বিশ্বের অন্যতম সফল জঙ্গী বিরোধী অপারেশন হিসাবে এটিকে ধরা হয়।
Comentarios: