আন্তর্জাতিক অপারেশন সফল করলো বাংলাদেশী প্যারা কমান্ডোরা - স্বপ্নের সৈনিক

রাশিয়ান-পর্তুগীজ স্পেশাল ফোর্স ব্যর্থ, অপারেশন সফল করলো বাংলাদেশী প্যারা কমান্ডোরা।




১০ জানুয়ারি ২০১৯ ; সেন্ট্রাল রিপাবলিক অফ আফ্রিকার একটি অন্যতম শহর বাম্বারি তে হঠাৎ আক্রমণ করে বসে সেই অঞ্চলে থাকা সরকার বিরোধী সন্ত্রাসী সংগঠন ইউনাইটেড ফর পিস ইন সেন্ট্রাল আফ্রিকা (ইউপিসি)। আক্রমণের মুল লক্ষ্য ছিল সেখানে থাকা সাধারণ জনগন থেকে আদায় করা ট্যাক্স এর অর্থ চুরি এবং জিম্মি করে চাঁদা আদায় করা সেই সাথে সেই অঞ্চলের দখল নেয়া। এই হামলায় অংশ নেয় ইউপিসি সন্ত্রাসী সংগঠন এর ২০-২৫ জন্য সশস্ত্র সামরিক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত যোদ্ধা যারা হেভি মেশিন গান, রকেট লঞ্চার সহ ঢুকে পরে বাম্বারি শহরে আর ব্যাপক ধ্বংস যজ্ঞ চালায়। তাদের হামলায় মারা যায় দুই জন্য পুলিশ সদস্য সহ স্থানীয় এক বাসিন্দা এবং আহত হয় আরও অনেকে।
এমন অবস্থায় দ্রুত সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সবচেয়ে কাছের শান্তিরক্ষী বেস থেকে মোতায়েন করা হয় পর্তুগীজ স্পেশাল প্যারা ট্রুপারদের একটি দল কে যাদের সাথে আরও যুক্ত হয় সেন্ট্রাল রিপাবলিক অব আফ্রিকার একটি সশস্ত্র বাহিনী যারা মুলত ছিল রাশিয়ান একটি ভাড়াটে সেনা দল। দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয় এবং দুই পক্ষের অত্যন্ত ৩০ জন্য সদস্য গান ফাইটে মারা যায় এবং ১০ জন গুরতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এইসময় সরকারী এক টুইট এর মাধ্যমে জানানো হয় এই হামলা অন্তত ২০ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী মারা গেছেন এবং সেই সাথে কিছু সাধারণ নাগরিক মারা যাবার কথা বলা হয়। মার্কিন গণমাধ্যমের তথ্য অনুসারে এই সময় এই ইউপিসির অপারেশন কমান্ডার জেনারেল বেলো গুরুতর আহত হন।
কিছু সময়ের জন্য দুই পক্ষের যুদ্ধ থেমে গেলেও ১১ জানুয়ারি ২০১৯ পর্তুগিজ স্পেশাল ফোর্স, নেপালি সেনাবাহিনী এর একটি ছোট দল এবং রাশিয়ান মার্সেনারি সৈনিক দের একটি দলের উপর দ্বায়িত্ব পরে সেই অঞ্চল কে দ্রুত শত্রু মুক্ত করার । এই অপারেশন প্রথমবারের মত ফ্রান্স বিমানবাহিনীর দুইটি মিরেজ২০০০ যুদ্ধ বিমান কে আকাশ থেকে এয়ার সাপোর্ট দেয়ার দ্বায়িত্ব প্রদান করা হয়। সেন্ট্রাল রিপাবলিক অফ আফ্রিকা প্রতিবেশী দেশ চাদ থেকে দুই টি মিরেজ ২০০০ বিমান উড্ড্য়ন করে এবং সেই অঞ্চল জুড়ে বিমান হামলা শুরু করে। বিমান গুলো ৪ ঘন্টার বেশি সময় ধরে আকাশে অবস্থান করে পর্তুগিজ এবং রাশিয়ার ভাড়াটে সৈনিক দলকে এয়ার সাপোর্ট প্রদান করতে থাকে এই সময় বিমান গুলোকে আকাশে তেল সরবরাহ করতে একটি কেসি১৩৫ এয়ার রিফুয়েলার মিশনে যুক্ত হয়। প্রায় ৮ ঘন্টা চলা এই অপারেশন দুই পক্ষের ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে এবং অনেক সিভিলিয়ান আহত হন।




কিন্তু এয়ার সাপোর্ট থাকার পরেও পর্তুগীজ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ফোর্স সেখানে খুব বেশি সুবিধা পেতে ব্যর্থ হয়। সেখানে থাকে জিম্মিদের উদ্ধার করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় নি। এরপর কিছু সময় পরিবেশ শান্ত থাকলেও সেখানে পুনরায় অপারেশন চালানোর অনুমতি দেয় জাতিসংঘ। পর্তুগিজ স্পেশাল ফোর্স এবং রাশিয়ার মার্সেনারি গ্রুপের ব্যর্থতার পর এবার অপারেশন এর দ্বায়িত্ব দেয় হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ফোর্স প্যারা কমান্ডো ইউনিট কে। অই অঞ্চল কে শত্রু মুক্ত করে সেখানে আটকে পড়া নাগরিক দের নিরাপদে উদ্ধার করাই ছিল বাংলাদেশ স্পেশাল ফোর্সের মুল দায়িত্ব। ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ (MINUSCA) ফোর্স কমান্ডার থেকে একটি অর্ডার আসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী স্পেশাল ফোর্স ব্যাটেলিয়ন -৩ এর কাছে দ্রুততম সময়ে সেই অঞ্চলে থাকা একটি পুরোপুরি সামরিক ভাবে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সন্ত্রাসী সংগঠন এর সাথে সম্মুখ যুদ্ধ করতে হবে। আদেশ পাওয়া মাত্র বাংলাদেশ স্পেশাল ফোর্স ব্যাটেলিয়ন ৩ এর ক্যাপ্টেন তারেক আহমেদ পৌছে যান বাম্বারি শহরে । ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ সকালে পাকিস্তান এয়ার ফোর্স এর একটি মিল এমাই-১৭ হেলিকপ্টার থেকে সেই অঞ্চলের উপর দিয়ে রিকন মিশন পরিচালনা করেন ক্যাপ্টেন তারিক। এসময় (MINUSCA) এর অধীনে থাকা সার্ভ্যেলয়ন্স ড্রোন থেকে সংগ্রহ করা ছবি তে দেখা যায় ইউপিসি সন্ত্রাসী দলের ৩০-৪০ জন সদস্য ভারি অস্ত্র সহ অই অঞ্চলে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছে।
১৭ জানুয়ারি ২০১৯ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী স্পেশাল প্যারা কমান্ডো ইউনিট এর একটি দল ক্যাপ্টেন তারিক আহমেদের নেতৃত্বে অপারেশন শুরু করে, এসময় ব্যাকাপ হিসাবে নেপালী সেনাবাহিনীর একটি দল যুক্ত হয়। পর্তুগীজ, রাশিয়ান এবং ফ্রান্স বিমানবাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণ ব্যর্থ হলেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ফোর্স অপারেশন পরিচালনায় প্রথমবারের মত নিজেদের সফলতা দেখায়। বাংলাদেশ স্পেশাল ফোর্স প্যারা কমান্ডো ইউনিট (BANSF-3) এর নেতৃত্বে সকাল ৮ টায় অপারেশন শুরু হয়। এই সময় অপারেশনে পর্তুগীজ স্পেশাল প্যারা কমান্ডো ইউনিট এবং নেপালী সেনাবাহিনীর সদস্যগন বাংলাদেশের নেতৃত্বে সেখানে এক যোগে আক্রমণ শুরু করে এবং ৮ ঘন্টা চলা তুমল সংঘর্ষে ইউপিসি সন্ত্রাসী সংগঠনের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যগন সন্ত্রাসীদের অধীনে থাকা ২ টি অঞ্চল কে মুক্ত করতে সক্ষম হন এবং তাদের বিভিন্ন অস্ত্র ধ্বংস করে দেয়া হয়। এসময় বাংলাদেশ স্পেশাল ফোর্স এর সদস্যগন সন্ত্রাসী এর হাতে থাকা ভারি অস্ত্রের মুখোমুখি হন তবে এই সংঘর্ষে বাংলাদেশী দল টির কেউ হতাহত হন নি। এই অপারেশন সন্ত্রাসীদের হাতে আটক থাকা ১৫০ জন জিম্মি কে উদ্ধার করে প্যারা কমান্ডোরা। অন্যদিকে ইউপিসি সন্ত্রাসী দলটির ৩০-৪০ জন সদস্য নিহত হয়। অপারেশন চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার গুলো এয়ার সাপোর্ট প্রদান এবং মেডিকেল ইভ্যাক মিশনে যুক্ত হয়।
পর পর ৩ টি দেশের ব্যার্থতার পর বাংলাদেশ স্পেশাল ফোর্স এর দামাল ছেলেরা এই অঞ্চল কে শত্রু মুক্ত করে অনন্য নজির স্থাপন করে। বাংলাদেশ স্পেশাল ফোর্স এর এই সফল অপারেশনের জন্য জাতিসংঘ এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকার সরকার থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূয়ষী প্রশংসা করা হয়৷
১৯ জানুয়ারি ২০১৯ সেন্ট্রাল রিপাবলিক অব আফ্রিকার বাম্বারি শহর কে শত্রু মুক্ত ঘোষনা করেন এই অপারেশন কমান্ডার মেজর মোঃ শহিদুল ইসলাম ( বাংলাদেশ স্পেশাল ফোর্স)।


পর পর ৩ টি দেশের ব্যার্থতার পর বাংলাদেশ স্পেশাল ফোর্স এর দামাল ছেলেরা এই অঞ্চল কে শত্রু মুক্ত করে অনন্য নজির স্থাপন করে। বাংলাদেশ স্পেশাল ফোর্স এর এই সফল অপারেশনের জন্য জাতিসংঘ এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকার সরকার থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূয়ষী প্রশংসা করা হয়৷