মিলিটারি ট্রেনিং নিঃসন্দেহে অনেককিছু শেখায়। স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিতেও শেখায়। পার্থক্যটা সামান্য।
মিলিটারিতে আপনাকে বলে-কয়ে শেখানো লাগবে না। টাইট দিলে এমনিই শিখবেন। মাছ কেমনে ধরতে হয় এটা নিয়ে আপনারে কোনো লেকচার- প্রেজেন্টেশন দেয়ার তেমন কোনো প্রয়োজন নাই। জানুয়ারি মাসের হাড়কাপানো ঠান্ডায় ভোর চারটায় আপনারে পুকুরে নামায় দিলেই হবে। শর্ত একটাই, মাছ না ধরা পর্যন্ত পুকুর থেকে উঠতে পারবেন না। শুধু মাছ কেনো? পুকুর থেকে হাঙ্গর-তিমিও ধরে আনতে পারবেন। ঝোপের আড়ালে ক্যামোফ্লাজ কিভাবে করা লাগে এই নিয়ে অতশত বই পড়ানোরও কোনো দরকার নাই। শত্রুপক্ষের হাতে ধরা পড়লে যদি পশ্চাৎদেশ লাল হয়ে যায়, তখন আপনি নিজেই এমনভাবে লুকাবেন যেন গরু আপনারে ঘাস-লতাপাতা ভেবে খেয়ে ফেলে!
যাইহোক, মিলিটারি লাইফ থেকে পাওয়া আমার সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো, জীবনে যেটা পাই সেটাই একটা প্রিভিলেজ, খালি হাতে দুনিয়ায় এসেছি, আর খালি হাতেই ফেরত যাবো। মাঝখানে যা পেলাম, তার কিছুই আমার পাওয়ার কথা না, পুরোটাই বোনাস। সবটাই প্রিভিলেজ। এমনকি প্রতিদিন সকালে যে আয়না দেখে শেভিং জেল লাগিয়ে শেভ করি, এটাও প্রিভিলেজ!
সার্ভাইভাল এক্সারসাইজে গিয়ে ক্যাম্প করলাম। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে হাতে রেজর নিয়ে তাবু থেকে বের হয়ে পানির ট্যাংকের দিকে দৌড় দিলাম, হাতে সময় অল্প, তাড়াতাড়ি শেভ করতে হবে। ট্যাংকের ট্যাপে মোচড় দিয়ে দেখি পানি নাই। সর্বনাশ! পাশে তাকিয়ে দেখি ধানক্ষেতে পানি সেচ দেওয়ার নালা দিয়ে পাম্পের পানির স্রোত বয়ে গেছে, স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ পানি।
আলহামদুলিল্লাহ, মুখে পানির ঝাপটা দিলাম। পরক্ষনেই মনে পড়লো, তাড়াহুড়ায় আয়না আর শেভিং জেল, কিছুই সাথে আনি নাই। কি করা যায়? পকেটে হাত দিতেই বের হলো একটা ক্লিয়ার ম্যান শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, ব্যাস এটাই মুখে ঘষে ফেনা তুললাম। কিন্তু আয়না সমস্যার সমাধান কী? না, কোনো সমাধান নাই। চোখ বন্ধ করে রেজার চালিয়ে দিলাম, যা হওয়ার হবে!
তখন টের পেলাম, আয়না দেখে শেভ করাটাও একটা প্রিভিলেজ, পেলে তো ভালোই, না পেলেও সমস্যা নাই।
এই যে বেঁচে আছি, এইটাও একটা প্রিভিলেজ, মরে গেলেও খুব একটা সমস্যা নাই। তবে হ্যা, কারো মৃত্যু বৃথা না হোক,জীবন আর মৃত্যুটা যেন অন্তত মিনিংফুল হয়...
Credit: Emtiaz Arman
Comentarios: