প্যারা কমান্ডো কোর্স বা আর্মি কমান্ডো কোর্স
প্যারা কমান্ডো কোর্স বা আর্মি কমান্ডো কোর্স বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সবচেয়ে কষ্টকর একটি প্রশিক্ষণ। সেনাবাহিনীর সকল আর্মস এবং সার্ভিস থেকে কেবলমাত্র স্বেচ্ছাসেবী অফিসার এবং সৈনিকরাই এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। এই প্রশিক্ষণ অত্যন্ত কঠোর এবং ঝুঁকিপূর্ণ।
প্যারা কমান্ডো প্রশিক্ষণের ব্যাপ্তিকাল ছয় মাস। এই ছয় মাসে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থী কমান্ডোকে যেতে হয় শারীরিক এবং মানসিক পরিশ্রমের সর্বোচ্চ পর্যায়ের মধ্য দিয়ে। প্রতিটি দিন যেন নরকের আগুনের মতো হয়ে ওঠে প্রশিক্ষণার্থী কমান্ডোর জন্য।
কঠোর নিয়মানুবর্তিতা, অমানুষিক পরিশ্রম আর অবর্ণনীয় শারিরীক নির্যাতন সহ্যের পর তৈরি হন একজন কমান্ডো। কখনো নামতে হয় উত্তাল সাগরের অতল গহ্বরে, কখনো অসীম নীলাকাশ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয় নিচে, কখনো বা হাড় কাঁপানো শীতের রাতে লড়তে হয় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা। ক্ষুধার তাড়নায় খেতে হয় অনেক অখাদ্য, সার্ভাইভাল ট্রেনিংয়ে গিয়ে লড়তে হয় নিজের ক্ষুধার্থ শরীরের প্রতিটি অণু-পরমাণুর সাথে।
এই ছয় মাসের নির্ঘুম রাত-দিনের হিসেব কমান্ডোদের থাকে না। ভয়ানক সব সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে আরও এক মাস প্যারাট্রুপিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণের পর প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থী কমান্ডো অর্জন করেন সেই দুর্লভ কমান্ডো ব্যাজ। অপ্রচলিত এবং প্রচলিত যুদ্ধের যত ধরন আছে, তার সবই নখদর্পনে থাকে বিশেষ প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত এই সকল যোদ্ধাদের।
প্যারা কমান্ডো প্রশিক্ষণ সবার জন্য নয়। এটি এক আদিম সত্য। তাই কমান্ডো অরিয়েন্টেশনের প্রথম রাত থেকেই শুরু হয় ঝরে পড়া। প্রতিটি ধাপ পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত যারা টিকে থাকে, তাদের শ্রেষ্ঠত্বটাও হয় একদম নিরেট!
কখনো কখনো এই ঝরে যাওয়াদের সংখ্যাই এসে দাঁড়ায় মোট প্রশিক্ষণার্থীর পঁচাশি শতাংশে। অর্থাৎ, মাত্র পনের শতাংশ প্রশিক্ষণার্থী পুরো কমান্ডো কোর্স সম্পন্ন করে বুকের বাম দিকে চকচকে সোনালি রঙের কমান্ডো ব্যাজ পরিধান করতে পারেন।
প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড
১৯৯৩ সালের জুলাই। বিশেষ বাহিনীর প্রথম ব্যাটালিয়নের পতাকা উত্তোলন করা হয় পূণ্যভূমি সিলেটে। '১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন' নামক স্বতন্ত্র এই ব্যাটালিয়নের প্রতিটি সদস্য দেশ এবং দেশের বাইরে সর্বোচ্চ শ্রমের মাধ্যমে দেশের পতাকার মান সমুন্নত রাখতে সদা প্রস্তুত। তার স্বীকৃতিও মিলেছে একের পর এক। সম্প্রতি ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নকে 'জাতীয় পতাকা' প্রদান করা হয়, যা কোনো একটি ব্যাটালিয়নের জন্য সর্বোচ্চ সার্ভিসের স্বীকৃতি।
প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন ২০১৬ সালে সেনা সদরের তত্ত্বাবধানে স্বতন্ত্র একটি বিশেষ অপারেশন ব্রিগেডে রূপ নিয়েছে, যেটি 'প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড' নামে পরিচিত। এর সদর দপ্তর সিলেটে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়।
ঠিক একইভাবে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই এদেশের বিশেষ বাহিনীর যাত্রা। তবে এই বিশেষ বাহিনী প্রতিষ্ঠানিক রূপ পায় ১৯৭৬ সালে। এরপর থেকে এই বাহিনী যেসব অপারেশনে অংশ নিয়েছে, তার প্রতিটিতেই অর্জন করেছে সফলতার মাল্য।
Comentarios: